বদলগাছীতে শিশু ধর্ষণচেষ্টা ৩০ হাজার টাকায় রফাদফা

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর  বদলগাছীতে শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা মাত্র ৩০ হাজার টাকায় রফাদফা করা অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিশুটি স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযোগটি উঠেছে উপজেলার মথুরাপুর ইউপিথর চাপাইনগর গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দীনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৪৫) এর বির“দ্ধে। থানায় অভিযোগ করা হলেও সেটি প্রত্যাহার করে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় রফাদফা করে প্রভাবশালী মহল। কিন্তু ভুক্তভোগীকে মাত্র তিন হাজার টাকা দিয়ে তার বাবা-মাসহ ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৪ জুলাই বিকালে ৫ম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরছিল। এ সময় আশরাফুল ইসলাম শিশুটিকে টেনে রাস্তার পাশে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। শিশুটির চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে আশরাফুল পালিয়ে যান। এলাকায় জানাজানি হলে বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ স্থানীয়রা দফায় দফায় সালিশ বৈঠকে বসে। কিন্তু কোনও সুরাহা না হওয়ায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা ১৭ জুলাই থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে প্রভাবশালীদের চাপে পড়ে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেয় ভুক্তভোগী পরিবার।
অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত ১৩ জুলাই তারিখ আমার বিরুদ্ধে বাবুল হোসেন তার মেয়ের সাথে মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টার গুজব রটায়। ধর্ষণ চেষ্টার গুজব রটানোর পরে আমাকে বিভিন্ন ভাবে মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রথমে আমার কাছে ২লাখ টাকা দাবি করেন। ২লাখ টাকা দিতে রাজি না হলে ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় আমার নামে বদলগাছী থানাতে ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা ও বানোয়াট একটি অভিযোগ করেন। মিথ্যা অভিযোগের পরে বিভিন্ন ভাবে মামলার ভয়-ভীতি দেখালে মান সম্মানের ভয়ে আমি ঐ মেয়ের বাবা বাবুল হোসেনকে বদলগাছীর একজন সাংবাদিক এর মাধ্যমে টাকা দিয়ে মিমাংসা করেছি বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আশরাফুলের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী একটা ভুল করে ফেলেছে। সেটা ২০ হাজার টাকায় মীমাংসা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মীমাংসা না করে তারা থানায় অভিযোগ করেন। তখন আমি আরও বেশি টাকা দিয়েই ঘটনাটি মীমাংসা করেছি। কোথায় কাকে টাকা দিয়েছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সেটা আমি বলবো না। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীর বাবা বাবুল হোসেন বলেন, থানায় অভিযোগ করেছিলাম। তবে মামলা চালাতে অনেক টাকা-পয়সা খরচ এবং বিভিন্ন ঝামেলা হবে। তাই মামলা না করে ২০ জুলাই অভিযোগটি তুলে নিয়েছি। পরে আমাদেরকে তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, আশরাফুলের স্ত্রী হাফিজার রহমান নামের স্থানীয় একজন সাংবাদিককে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসার কথা আমাকে মোবাইলে জানিয়েছিল। কিন্তু আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পারবো না।
আপোষের বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিক হাফিজার রহমান বলেন, শিশুটি আমার আত্মীয়। আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে আমি আপোষ করে দিয়েছি। মেয়েটি গ্রামেই পড়াশুনা করে। তার বাবা-মা ঢাকায় চাকরি করেন। ঈদের ছুটিতে তারা বাড়িতে এসেছিল। এসব কারণে শিশুটিকে নিয়ে তারা ঢাকায় চলে গেছে। এ বিষয়ে বদলগাছী থানার এসআই মনোয়ার হোসেন বলেন, ৮/৯ বছরের একটি শিশুকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ভুক্তভোগীর পরিবারকে থানায় এজাহার দাখিলের জন্য বারবার বলেছিলাম কিন্তু তারা কোন এজাহার দাখিল করেননি। পরে সাংবাদিক হাফিজার রহমানের কাছে জানতে পারলাম তারা ঢাকায় চলে গেছেন।
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, থানায় কেউ মামলা করেন নি। তবে বিষয়টি শুনেছি এবং ভুক্তভোগী পরিবারটি নাকি  ঢাকায় চলে গেছেন। মিমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতই মিমাংসা হোক, বাদি এজাহার দাখিল করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related posts

Leave a Comment